মহাদেব সাহার “এই অক্ষরে” কবিতাটি বাংলা ভাষা ও অক্ষরের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং এর শক্তিকে নিয়ে লেখা। নিচে এই অক্ষরে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – মহাদেব সাহা দেয়া হল।
এই অক্ষরে কবিতার মূলভাব
মহাদেব সাহার “এই অক্ষরে” কবিতাটি বাংলা ভাষা ও অক্ষরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। বাংলা অক্ষর শুধু কাগজে লেখা কিছু চিহ্ন নয়, এগুলো যেন জীবন্ত। এগুলো অবিরাম ঝরনার মতো, যা সব সময় প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলা অক্ষরগুলো যেন আকাশের তারা, যা আমাদের পাহারা দিচ্ছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের ইতিহাস ও সংগ্রামের কথা। মায়ের কাছ থেকেই আমরা প্রথম বাংলা ভাষা শিখি। তাই বাংলা অক্ষর দেখলেই কবির মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি ভাবেন, জীবনে অনেক কিছু পাওয়া-না পাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখা একটি চিঠি পেলেই তার মন ভরে যায়।
কবি আরও বলেন, বাংলা অক্ষরগুলো যেন সুরের নূপুর পরে আছে। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা, সব সময়ই এই অক্ষরগুলো তার মনে গান বাজায়। এগুলো তাকে স্বপ্ন দেখায়, রূপকথার জগতে নিয়ে যায়। কবি শেষে বলেন, বাংলা অক্ষর শুধু তার নিজের নয়, এটা সব বাঙালির। এটি আপন-পর সবাইকে একসাথে বেঁধে রাখে। এই ভাষা আমাদের আশা দেয়, আমাদের স্বপ্ন দেখায়। এটি এমন এক শক্তি, যা দিয়ে আমরা শিলালিপি লিখি, গান লিখি, এমনকি যুদ্ধেও জয়ী হই।
এই অক্ষরে কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“এই অক্ষর যেন নির্ঝর, ছুটে চলে অবিরাম” | কবি বলছেন, বাংলা অক্ষর বা বর্ণমালা যেন একটি ঝরনার মতো, যা কখনো থামে না। এটি অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে অবিরাম প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলা ভাষা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুরু হয়ে আমাদের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। |
“যেন কিছু তারা দিচ্ছে পাহারা, আকাশেতে লিখে নাম” | বাংলা অক্ষরগুলো যেন আকাশের তারার মতো জ্বলজ্বল করছে। এগুলো আমাদের পাহারা দিচ্ছে এবং আমাদের ইতিহাস ও সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এক সময় বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা হতো, কিন্তু বাঙালিরা তাদের ভাষার জন্য লড়াই করেছে এবং জয়ী হয়েছে। এই অক্ষরগুলো সেই সংগ্রামের সাক্ষী। |
“অক্ষরগুলি চায় মুখ তুলি, অন্তরে জাগে গান” | বাংলা অক্ষরগুলো যেন মুখ তুলে আমাদের দিকে তাকায় এবং আমাদের মনে গান জাগিয়ে তোলে। এটি আমাদের আবেগ ও অনুভূতিকে স্পর্শ করে, আমাদের মনে আনন্দ ও সুরের সৃষ্টি করে। |
“শিখি তার কাছে অজানা যা আছে, আনন্দে ভরে প্রাণ” | বাংলা অক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন জিনিস শিখি। এটি আমাদের অজানা বিষয়গুলো জানার সুযোগ দেয় এবং আমাদের প্রাণকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। |
“এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে, মন হয়ে যায় নদী” | কবি বলছেন, বাংলা অক্ষর দেখলে তার মায়ের কথা মনে পড়ে। কারণ, মায়ের কাছ থেকেই আমরা প্রথম বাংলা ভাষা শিখি। এই স্মৃতি তার মনকে নদীর মতো প্রবাহিত করে, আবেগে ভরিয়ে তোলে। |
“আর কিছু তাই পাই বা না পাই, চিঠিখানা পাই যদি” | কবি বলছেন, জীবনে অনেক কিছু পাওয়া-না পাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখা একটি চিঠি পেলেই তার মন ভরে যায়। এটি তার হৃদয়ে সুখ ও সান্ত্বনা আনে। |
“সেই উপমায় মন ভরে যায়, দেখি অপরূপ ছবি” | বাংলা অক্ষরের মাধ্যমে কবির মনে সুন্দর সুন্দর ছবি ভেসে ওঠে। এটি তার মনকে আনন্দ ও সৌন্দর্যে ভরিয়ে তোলে। |
“সকাল দুপুর সুরের নূপুর, বাজায় উদাস কবি” | বাংলা অক্ষরগুলো যেন সুরের নূপুর পরে আছে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা—সব সময়ই এই অক্ষরগুলো কবির মনে গান বাজায় এবং তাকে স্বপ্ন দেখায়। |
“এই অক্ষরে ডাক নাম ধরে, ডাক দেয় বুঝি কেউ” | কবি বলছেন, বাংলা অক্ষরগুলো যেন তাকে নাম ধরে ডাকে। এটি তার মনে রূপকথা ও স্বপ্নের জগত তৈরি করে। |
“স্বপ্নের মতো রূপকথা যতো, অন্তরে তোলে ঢেউ” | বাংলা অক্ষর কবির মনে স্বপ্ন ও রূপকথার ঢেউ তোলে। এটি তাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায় এবং তার মনকে উদ্বেলিত করে। |
“এই অক্ষর আত্মীয়-পর, সকলেরে কাছে টানে” | বাংলা অক্ষর শুধু কবির নিজের নয়, এটি সব বাঙালির। এটি আপন-পর সবাইকে একসাথে বেঁধে রাখে এবং সবাইকে কাছে টানে। |
“এই প্রিয় ভাষা বুকে দেয় আশা, বিমোহিত করে গানে” | বাংলা ভাষা কবির প্রিয় ভাষা। এটি তার বুকে আশা জাগায় এবং গানের মাধ্যমে তাকে মুগ্ধ করে। |
“এই অক্ষরে কঠিন পাথরে, শিলালিপি লেখা হয়” | বাংলা অক্ষর দিয়ে শিলালিপি লেখা হয়, যা দীর্ঘস্থায়ী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। এটি আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী। |
“এই ভাষা দিয়ে, গান লিখে নিয়ে, যুদ্ধ করেছি জয়” | কবি বলছেন, বাংলা ভাষার মাধ্যমেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এটি আমাদের সংগ্রাম ও বিজয়ের হাতিয়ার। বাংলা ভাষার জন্যই আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। |