বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতাটি একটি কিশোরের কল্পনাপ্রবণ মনের সুন্দর চিত্রায়ন। কবিতাটিতে নদী, নৌকা, প্রকৃতি এবং ভাই-বোনের সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। নিচে নদীর স্বপ্ন কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেওয়া হল।
নদীর স্বপ্ন কবিতার মূলভাব
বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতাটি একটি ছেলে কানাই এবং তার ছোট বোন ছোকানুর গল্প। কানাই খুব দুরন্ত এবং কল্পনাপ্রবণ। সে নদী, নৌকা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ। একদিন সে এবং তার বোন ছোকানু নদীতে নৌকায় ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে। কানাই নৌকার মাঝিকে অনুরোধ করে তাদের নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য। কানাই আরও বলে যে তার বোন ছোকানুও তার সঙ্গে আছে।
তারা দুজনে মিলে নৌকায় চড়ে নদীপথে ভ্রমণ করতে চায়। নৌকায় উঠে তারা দেখে জেলেরা নদীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ ধরছে। নৌকায় ইলিশ মাছ ভাজা এবং ভাত খেয়ে তারা খুব খুশি হয়।খাওয়া শেষে ছোকানু ঘুমিয়ে পড়ে। সে মাঝিকে বলে যে ছোকানু খুব ভীতু, তাই তাকে দেখে রাখতে। আর যদি ঝড় আসে, তাহলে তাকে ডাকতে, কারণ সে বড় হয়েছে এবং ঝড়ের মোকাবিলা করতে পারবে।
নদীর স্বপ্ন কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“কোথায় চলেছো? এদিকে এসো না! দুটো কথা শোনো দিকি,” | কানাই নৌকার মাঝিকে ডাকছে। সে মাঝিকে কাছে আসতে বলছে এবং তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। এখানে কানাইয়ের উৎসাহ এবং মাঝির প্রতি তার আকর্ষণ ফুটে উঠেছে। |
“এই নাও – এই চকচকে, ছোটো, নতুন রুপোর সিকি।” | কানাই মাঝিকে একটি নতুন রুপোর সিকি (ছোট মুদ্রা) দিতে চায়। এটি শিশুর সরলতা এবং তার সামান্য সম্পদ দিয়ে অন্যকে খুশি করার ইচ্ছাকে প্রকাশ করে। |
“ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে, তোমায় দিচ্ছি তাও,” | কানাইয়ের ছোট বোন ছোকানুর কাছেও কিছু টাকা (আনি) আছে, যা সে মাঝিকে দিতে চায়। |
“আমাদের যদি তোমার সঙ্গে নৌকায় তুলে নাও।” | কানাই মাঝিকে অনুরোধ করে তাদের নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য। |
“নৌকা তোমার ঘাটে বাঁধা আছে, যাবে কি অনেক দূরে?” | কানাই জিজ্ঞাসা করে নৌকাটি কত দূরে যাবে। |
“পায়ে পড়ি, মাঝি, সাথে নিয়ে চলো মোরে আর ছোকানুরে।” | কানাই মাঝির পায়ে পড়ে অনুরোধ করে তাকে এবং তার বোনকে নৌকায় তুলে নিতে। |
“আমারে চেনো না? আমি যে কানাই। ছোকানু আমার বোন।” | কানাই নিজের পরিচয় দেয় এবং বলে যে ছোকানু তার ছোট বোন। |
“তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা মেঘনা, পদ্মা, শোণ।” | কানাই এবং ছোকানু মাঝির সঙ্গে মেঘনা, পদ্মা, শোণ নদী দেখতে চায়। |
“শোনো, মা এখন ঘুমিয়ে আছেন, দিদি গেছে ইশকুলে,” | কানাই বলে যে তাদের মা ঘুমিয়ে আছেন এবং বড় বোন স্কুলে গেছে। |
“এই ফাঁকে মোরে -আর ছোকানুরে নৌকোয় নাও তুলে।” | কানাই মাঝিকে অনুরোধ করে এই সুযোগে তাদের নৌকায় তুলে নিতে। |
“কোনো ভয় নেই – বাবার বকুনি তোমায় হবে না খেতে,” | কানাই মাঝিকে আশ্বস্ত করে যে তাদের বাবা মাঝিকে বকা দেবেন না। |
“যত দোষ সব আমরা -না, আমি একা নেবো মাথা পেতে।” | কানাই বলে যে সব দোষ সে একা নেবে। |
“ওটা কী? জেলের নৌকা ? – তাই তো! জাল টেনে তোলা দায়,” | কানাই জেলেদের নৌকা দেখে এবং তাদের জাল টানার কষ্টের কথা বলে। |
“রুপোলি নদীর রুপোলি ইলিশ। ইশ, চোখে ঝলসায়!” | কানাই রুপোলি ইলিশ মাছ দেখে মুগ্ধ হয়। |
“ইলিশ কিনলে?- আঃ, বেশ, বেশ, তুমি খুব ভালো, মাঝি।” | কানাই মাঝিকে ইলিশ মাছ কিনতে বলে এবং তাকে ধন্যবাদ জানায়। |
“উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক রান্নার কারসাজি।” | কানাই মাঝিকে চুলা জ্বালাতে বলে এবং ছোকানুকে রান্নায় সাহায্য করতে বলে। |
“পইঠায় বসে ধোঁয়া ওঠা ভাত, টাটকা ইলিশ ভাজা-“ | কানাই এবং ছোকানু নৌকায় বসে গরম ভাত এবং টাটকা ইলিশ মাছ ভাজা খায়। |
“ছোকানু রে, তুই আকাশের রানি, আমি পদ্মার রাজা।” | কানাই নিজেকে পদ্মার রাজা এবং ছোকানুকে আকাশের রানি বলে ডাকে। |
“খাওয়া হলো শেষ, আবার চলছি দুলছে ছোট্ট নাও,” | খাওয়া শেষে তারা আবার নৌকায় চলতে থাকে। |
“হালকা নরম হাওয়ায় তোমার লাল পাল তুলে দাও।” | কানাই মাঝিকে নৌকার লাল পাল তুলে দিতে বলে। |
“ছোকানুর চোখ ঘুমে ঢুলে আসে আমি ঠিক জেগে আছি,” | ছোকানু ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু কানাই জেগে থাকে। |
“গান গাওয়া হলে আমায় অনেক গল্প বলবে, মাঝি?” | কানাই মাঝিকে গল্প বলার অনুরোধ করে। |
“শুনতে শুনতে আমিও ঘুমোই বিছানা বালিশ বিনা।” | গল্প শুনতে শুনতে কানাইও ঘুমিয়ে পড়ে। |
“মাঝি, তুমি দেখো ছোকানুরে, ভাই, ও বড়োই ভীতু কিনা। | ঘুমানোর আগে কানাই মাঝিকে বলে যে ছোকানু খুব ভীতু, তাই তাকে দেখে রাখতে। |
“আমার জন্যে কিচ্ছু ভেবো না আমি তো বড়োই প্রায়।” | কানাই বলে যে সে বড় হয়েছে এবং তার জন্য চিন্তা করার দরকার নেই। |
“ঝড় এলে ডেকো আমারে -ছোকানু যেন সুখে ঘুম যায়।” | কানাই মাঝিকে বলে যে ঝড় এলে তাকে ডাকতে, যেন ছোকানু নিরাপদে ঘুমাতে পারে। |