কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর জীবন ও আদর্শকে কেন্দ্র করে রচিত। নিচে উমর ফারুক কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা দেয়া হল।
উমর ফারুক কবিতার মূলভাব
‘উমর ফারুক’ কবিতাটিতে উমর (রা.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব এবং তার শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে ধারণ করে। উমর (রা.)-এর জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সহজ ও সরল। তিনি রাজকীয় বিলাসিতা থেকে দূরে থাকতেন এবং সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন। কবিতায় তার উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার এবং ভৃত্যের সাথে তার আচরণের বর্ণনা রয়েছে। উমর (রা.)-এর মানবপ্রেম এবং দরিদ্রদের প্রতি তার মমত্ববোধ কবিতায় বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি একজন মায়ের দুঃখ দেখে নিজে খাদ্য বহন করে তার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন, যা তার মানবিক গুণাবলীর পরিচয় দেয়।
হজরত উমরের পুত্র আবু শাহমাকে মদপানের অপরাধে খলিফা তাকে ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন এবং নিজেই বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাতের ফলে আবু শাহমার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা উমর (রা.) এর সুশাসনের চিত্র তুলে ধরে। কবিতাটি শেষ হয়েছে উমর (রা.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব এবং তার আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
উমর ফারুক কবিতার ব্যাখ্যা
কবিতার লাইন | ব্যাখ্যা |
“তিমির রাত্রি-‘এশা’র আজান শুনি দূর মসজিদে।” | কবিতাটি শুরু হয়েছে একটি মসজিদের আজানের মাধ্যমে, যা কবির হৃদয়ে উমর (রা.)-এর স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। |
“প্রিয়-হারা কার কান্নার মত এ-বুকে আসিয়া বিধে!” | কবি উমর (রা.)-এর ন্যায়বিচার, ত্যাগ, এবং মানবতার আদর্শকে স্মরণ করেন। |
“আমির-উল-মুমেনিন, তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন।” | উমর (রা.)-এর স্মৃতি আজানের ধ্বনির সাথে মিশে আছে, কিন্তু অনেক মুয়াজ্জিন তা জানে না। |
“তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি, বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কি-রে গগনে মরুর শশী?” | কবি আজানের ধ্বনি শুনে শয্যা ছেড়ে উঠে বসেন এবং আকাশে চাঁদ উঠেছে কিনা তা দেখতে চান। |
“ও-আজান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান? মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্বান?” | কবি আজানের ধ্বনিকে পাপিয়া পাখির ডাক বা চকোর পাখির গানের সাথে তুলনা করেন। |
“আবার লুটায়ে পড়ি। ‘সেদিন গিয়াছে’-শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি।” | কবি আবার শয্যায় লুটিয়ে পড়েন এবং কালের ঘড়ি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সেই দিন গত হয়েছে। |
“উমর! ফারুক! আখেরী নবির ওগো দক্ষিণ-বাহু! আহ্বান নয় রূপ ধরে এস গ্রাসে অন্ধতা রাহু!” | কবি উমর (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেন যে তিনি শেষ নবির দক্ষিণ বাহু এবং তার আহ্বান অন্ধকারকে গ্রাস করে। |
“ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন! সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ!” | কবি ইসলামের সূর্যকে উল্লেখ করে বলেন যে তার জ্যোতি দিনে দিনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে এবং সত্যের আলো জোনাকির আলোর মতো ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। |
“শুধু আঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের।” | কবি উমর (রা.)-এর শাসনক্ষমতা এবং তার তরবারির কথা উল্লেখ করেন, যা তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর চরণে সমর্পণ করেছিলেন। |
“ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি।” | কবি উমর (রা.)-কে ফিরদৌস (স্বর্গ) ছেড়ে নেমে আসার আহ্বান জানান এবং তরবারি ধরে লোহিত সাগরে লাল হয়ে মরার কথা বলেন। |
“ইসলাম-সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি? পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।” | কবি ইসলামকে পরশমণির সাথে তুলনা করেন, যার স্পর্শে লোহাও সোনা হয়ে যায়। |
“আজ বুঝি-কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর -মোর পরে যদি নবি হত কেউ, হত সে এক উমর।'” | কবি শেষ নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর উক্তি উল্লেখ করে বলেন যে তিনি বলেছিলেন, তার পরে যদি কেউ নবি হত, তাহলে সে হত উমর। |
“অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধূলার তখতে বসি খেজুর পাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’নুয়ে, ঊর্ধ্বের যারা-পড়েছে তাহারা, তুমি ছিলে খাড়া ভূঁয়ে।” | কবি উমর (রা.)-এর শাসনক্ষমতা এবং তার সহজ-সরল জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করতেন, কিন্তু তার প্রাসাদ ছিল খেজুর পাতার তৈরি, যা সাইমুম ঝড়ে উড়ে যেত। |
“শত প্রলোভন বিলাস বাসনা ঐশ্বর্যের মদ করেছে সালাম দূর হতে সব ছুঁইতে পারেনি পদ।” | কবি উমর (রা.)-এর ন্যায়বিচার এবং তার প্রলোভন থেকে দূরে থাকার কথা উল্লেখ করেন। |
“সবারে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া তুমি ছিলে সব নিচে, বুকে করে সবে বেড়া করি পার, আপনি রহিলে পিছে।” | কবি উমর (রা.)-এর মানবপ্রেম এবং তার ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি সবাইকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন, কিন্তু নিজে নিচে থাকতেন। |
“হেরি পশ্চাতে চাহি- তুমি চলিয়াছ রোদ্রদগ্ধ দূর মরুপথ বাহি জেরুজালেমের কিল্লা যথায় আছে অবরোধ করি বীর মুসলিম সেনাদল তব বহু দিন মাস ধরি।” | কবি উমর (রা.)-এর জেরুজালেম অভিযানের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি মরুভূমির পথে চলেছেন এবং মুসলিম সেনাদলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। |
“দুর্গের দ্বার খুলিবে তাহারা বলেছে শত্রু শেষে -উমর যদি গো সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে এসে!” | কবি উমর (রা.)-এর জেরুজালেম অভিযানের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে শত্রুরা বলেছিল যে দুর্গের দরজা খুলবে যদি উমর সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন। |
“হায় রে, আধেক ধরার মালিক আমির-উল-মুমেনিন শুনে সে খবর একাকী উষ্ট্রে চলেছে বিরামহীন সাহারা পারায়ে! ঝুলিতে দু খানা শুকনো ‘খবুজ’ রুটি একটি মশকে একটুকু পানি খোর্মা দু তিন মুঠি।” | কবি উমর (রা.)-এর সহজ-সরল জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি অর্ধ পৃথিবীর মালিক হয়েও উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়েছেন এবং তার সাথে শুধু দুটি শুকনো রুটি, একটুকু পানি এবং কিছু খেজুর ছিল। |
“প্রহরীবিহীন সম্রাট চলে একা পথে উটে চড়ি চলেছে একটি মাত্র ভৃত্য উষ্ট্রের রশি ধরি!” | কবি উমর (রা.)-এর সহজ-সরল জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি সম্রাট হয়েও কোনো প্রহরী ছাড়াই উটের পিঠে চড়ে চলেছেন এবং তার সাথে শুধু একটি ভৃত্য ছিল। |
“মরুর সূর্য ঊর্ধ্ব আকাশে আগুন বৃষ্টি করে, সে আগুন-তাতে খই সম ফোটে বালুকা মরুর পরে।” | কবি মরুভূমির সূর্যের তাপের কথা উল্লেখ করেন, যা বালুকায় আগুনের মতো জ্বলে। |
“কিছুদুর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, ‘ভাই পেরেশান বড় হয়েছ চলিয়া! এইবার আমি যাই উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে, তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।'” | কবি উমর (রা.)-এর মানবপ্রেমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ভৃত্যকে উটের পিঠে বসিয়ে দিয়েছেন এবং নিজে উটের রশি ধরে হেঁটে চলেছেন, যদিও তার পায়ে রক্ত ফুটে উঠেছে। |
“…ভৃত্য হস্ত চুমি কাঁদিয়া কহিল, ‘উমর! কেমনে এ আদেশ কর তুমি? উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি?” | ভৃত্য উমর (রা.)-এর আদেশে কাঁদতে থাকে এবং বলে যে কীভাবে তিনি নিজে উটের পিঠে বসে থাকবেন আর উমর হেঁটে যাবেন। |
“খলিফা হাসিয়া বলে, ‘তুমি জিতে গিয়ে বড় হতে চাও, ভাই রে, এমনি ছলে। রোজ-কিয়ামতে আল্লাহ যে দিন কহিবে, ‘উমর! ওরে করে নি খলিফা, মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে।'” | উমর (রা.) হেসে বলেন যে ভৃত্য যদি বড় হতে চায়, তাহলে তাকে এমনি করেই করতে হবে। তিনি আরও বলেন যে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে তিনি মুসলিমদের সুখের জন্য কী করেছেন। |
“কী দিব জওয়াব কী করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই। আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু। মোর অধিকার নাই। আরাম সুখের, মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা। ইসলাম বলে, সকলে সমান, কে বড় ক্ষুদ্র কেবা।” | উমর (রা.) বলেন যে তিনি মুসলিমদের প্রতিনিধি মাত্র এবং তার কোনো অধিকার নেই। তিনি আরও বলেন যে ইসলামে সবাই সমান, কেউ বড় বা ছোট নয়। |
“ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি, মানুষেরে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী।” | ভৃত্য উটের পিঠে চড়ে এবং উমর উটের রশি ধরে হেঁটে চলেন। কবি বলেন যে উমর মানুষকে স্বর্গে তুলে ধরেছেন এবং নিজে ধুলায় নেমে এসেছেন। |
“জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্প বৃষ্টি হইল কিনা, কী গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দি’ বিশ্ববীণা। জানি না, সেদিন ফেরেশতা তব করেছে কি না স্তব- অনাগত কাল গেয়েছিল শুধু, ‘জয় জয় হে মানব।'” | কবি বলেন যে তিনি জানেন না সেদিন আকাশে ফুল বৃষ্টি হয়েছিল কিনা বা মানুষ কী গান গেয়েছিল। তিনি আরও বলেন যে ফেরেশতারা সেদিন উমর (রা.)-এর স্তব গেয়েছিল এবং অনাগত কাল শুধু ‘জয় জয় হে মানব’ গেয়েছিল। |
“তুমি নির্ভীক, এক খোদা ছাড়া করনি ক’ কারে ভয়, সত্যব্রত তোমায় তাইতে সবে উদ্ধত কয়।” | কবি উমর (রা.)-এর নির্ভীকতা এবং সত্যের প্রতি তার নিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন। |
“মানুষ হইয়া মানুষের পূজা মানুষেরি অপমান, তাই মহাবীর খালেদেরে তুমি পাঠাইলে ফরমান, সিপাহ-সালারে, ইঙ্গিতে তব করিলে মামুলি সেনা, বিশ্ব-বিজয়ী বীরেরে শাসিতে এতটুকু টলিলে না।” | কবি উমর (রা.)-এর মানবপ্রেম এবং তার ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি মহাবীর খালেদকে ফরমান পাঠিয়েছিলেন এবং তার ইঙ্গিতে সেনারা বিশ্ব-বিজয়ী বীরকে শাসন করেছিল। |
“মানব-প্রেমিক! আজিকে তোমারে স্মরি, মনে পড়ে তব মহত্ত্ব-কথা-সেদিন সে বিভাবরী নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুধাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে কাঁদিতেছে আর দুঃখিনী মাতা ছেলেরে ভুলাতে হায়, উনানে শূন্য হাঁড়ি চড়াইয়া কাঁদিয়া অকূলে চায়।” | কবি উমর (রা.)-এর মানবপ্রেমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি এক রাতে নগর ভ্রমণে বেরিয়ে একটি মা এবং তার দুটি ক্ষুধার্ত শিশুকে কাঁদতে দেখেন। |
“শুনিয়া সকল-কাঁদিতে কাঁদিতে ছুটে গেলে মদিনাতে বায়তুল-মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে, বলিলে, ‘এ সব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের’ পরে, আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে।'” | উমর (রা.) মায়ের দুঃখ দেখে কাঁদতে কাঁদতে মদিনায় গেলেন এবং বায়তুল মাল থেকে ঘি ও আটা নিয়ে নিজের পিঠে চাপিয়ে দুখিনী মায়ের ঘরে নিয়ে গেলেন। |
“কত লোক আসি আপনি চাহিল বহিতে তোমার বোঝা, বলিলে, ‘বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা! রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বল আমার পাপের ভার? মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজি তার প্রায়শ্চিত্ত করিব আমি’-চলিলে নিশীথ রাতে পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে!” | অনেক লোক উমর (রা.)-এর বোঝা বহন করতে চাইল, কিন্তু তিনি বললেন যে তিনি নিজেই এটি বহন করবেন। তিনি আরও বলেন যে কিয়ামতের দিন কে তার পাপের ভার বহন করবে, কারণ তার অপরাধে শিশুরা ক্ষুধায় কেঁদেছে। |
“এত যে কোমল প্রাণ, করুণার বশে তবু গো ন্যায়ের করনি কো অপমান!” | কবি উমর (রা.)-এর কোমল হৃদয় এবং ন্যায়ের প্রতি তার নিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন। |
“মদ্যপানের অপরাধে প্রিয় পুত্রেরে নিজ করে মেরেছ দোরা, মরেছে পুত্র তোমার চোখের পরে। ক্ষমা চাহিয়াছে পুত্র, বলেছ পাষাণে বক্ষ বাঁধি- ‘অপরাধ করে তোরি মত স্বরে কাঁদিয়াছে অপরাধী।” | কবি উমর (রা.)-এর ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি মদ্যপানের অপরাধে নিজের পুত্রকে চাবুক মেরেছিলেন, যার ফলে পুত্র মারা গেল। পুত্র ক্ষমা চাইলে উমর (রা.) পাষাণ হৃদয়ে বলেছিলেন যে অপরাধ করে কেঁদেছে। |
“আবু শাহমার গোরে কাঁদিতে যাইয়া ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে খাস দরবার ভরিয়া গিয়াছে হাজার দেশের লোকে, ‘কোথায় খলিফা’ কেবলি প্রশ্ন ভাসে উৎসুক চোখে, একটি মাত্র পিরান কাচিয়া শুকায়নি তাহা বলে, রোদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা-তলে।” | কবি উমর (রা.)-এর সহজ-সরল জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আবু শাহমার কবরে কাঁদতে গিয়েছিলেন এবং ফিরে এসে দেখেন যে তার দরবার হাজার হাজার লোকে ভরা। লোকেরা জিজ্ঞাসা করছে কোথায় খলিফা, কিন্তু উমর (রা.) আঙিনায় বসে আছেন এবং তার একটি মাত্র জামা কাচা শুকায়নি। |
“হে খলিফাতুল-মুসলেমিন! হে চীরধারী সম্রাট! অপমান তব করিব না আজ করিয়া নান্দী পাঠ, মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই।” | কবি উমর (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেন যে তিনি খলিফাতুল মুসলেমিন এবং চীরধারী সম্রাট। তিনি আরও বলেন যে উমর (রা.) মানুষকে বন্ধু এবং ভাই বলেছেন, তাই তিনি তাকে সর্বদাই স্মরণ করেন। |