অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু – বেগম রোকেয়া

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধটি নারী-পুরুষের সমান অধিকার, নারীর শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান এবং মানসিক দাসত্বের বিষয়ে গভীর চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে। নিচে অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের মূলভাব

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে তিনি নারী-পুরুষের সমান অধিকার, নারীর শিক্ষা এবং সামাজিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নারীদের অবনতির মূল কারণ হলো তাদের শিক্ষা ও স্বাধীনতার অভাব। সমাজ নারীদেরকে পুরুষের ‘অর্ধাঙ্গী’ বা অর্ধেক অংশ হিসেবে দেখে, যা সম্পূর্ণ ভুল। নারী-পুরুষ উভয়েই সমান এবং একে অপরের পরিপূরক। তিনি মানসিক দাসত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান। রোকেয়া নারীশিক্ষার প্রসারের উপর জোর দেন এবং বলেন, মায়েরা শিক্ষিত না হলে সন্তানদেরও প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি সমাজের বিকৃতির উদাহরণ দিয়ে বলেন, নারীদেরকে দুর্বল ভাবার কারণে সমাজও বিকৃত হয়ে গেছে। তিনি নারীদেরকে শুধু সংসারের কাজে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষা, চাকরি এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। রোকেয়া আশা প্রকাশ করেন যে, একদিন নারীরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পাবে এবং সমাজে সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। তাঁর মতে, নারীদের উন্নতি ছাড়া সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।

অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের বিষয়বস্তু

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধটি মূলত নারী-পুরুষের সমান অধিকার, নারীর শিক্ষা এবং সামাজিক অবস্থান নিয়ে লেখা। নিচে অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের বিষয়বস্তু :

১. নারীর অবনতির কারণ:

রোকেয়া বলেন, নারীদের একটি বড় সমস্যা হলো তাদের ‘দাসত্ব’। এই দাসত্ব শারীরিক নয়, বরং মানসিক। সমাজ নারীদেরকে শিক্ষা ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে, যার ফলে তারা পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, নারীদের উন্নতি করতে হলে প্রথমে তাদের অবনতির কারণ বুঝতে হবে।

২. পর্দাপ্রথা ও মানসিক দাসত্ব:

রোকেয়া পর্দাপ্রথার বিরোধিতা করেন না, কিন্তু তিনি মানসিক দাসত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পার্সি মহিলারা পর্দা ছেড়েছেন, কিন্তু তাদের মানসিক দাসত্ব এখনও রয়ে গেছে। কারণ তারা পুরুষের নির্দেশেই পর্দা ছেড়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নয়। তিনি বলেন, নারীদেরকে নিজের ইচ্ছায় স্বাধীন হতে হবে।

৩. নারীর শিক্ষার অভাব:

রোকেয়া বলেন, নারীদের শিক্ষার অভাবই তাদের অবনতির মূল কারণ। সমাজে মেয়েদেরকে শুধু রান্না, সেলাই এবং সংসারের কাজ শেখানো হয়, কিন্তু তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি মায়েরা শিক্ষিত না হন, তাহলে সন্তানরা কীভাবে শিক্ষিত হবে? তিনি নারীশিক্ষার প্রসারের উপর জোর দেন।

৪. নারীর সমান অধিকার:

রোকেয়া বলেন, নারী-পুরুষের সম্পর্কে সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি ‘অর্ধাঙ্গী’ শব্দটির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নারীকে পুরুষের অর্ধেক ভাবা ঠিক নয়। নারী-পুরুষ উভয়েই সমান এবং একে অপরের পরিপূরক। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন একটি গাড়ির দুটি চাকা সমান না হলে গাড়ি চলতে পারে না, তেমনি নারী-পুরুষ সমান না হলে সমাজও এগোতে পারে না।

৫. সমাজের বিকৃতি:

রোকেয়া বলেন, নারীদেরকে দুর্বল ভাবার কারণে সমাজ নিজেই বিকৃত হয়ে গেছে। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি একজন মানুষের ডান হাত বড় এবং বাম হাত ছোট হয়, তাহলে তার শরীর কতটা বিকৃত দেখাবে! তেমনি সমাজে নারীদেরকে ছোট ভাবার কারণে সমাজও বিকৃত হয়ে গেছে।

৬. নারীর আত্মনির্ভরশীলতা:

রোকেয়া নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নারীদেরকে শুধু সংসারের কাজে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদেরকে শিক্ষা, চাকরি এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, নারীদের উন্নতি ছাড়া সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।

৭. শেষ কথা:

রোকেয়া বলেন, নারীদের উন্নতি করতে হলে তাদেরকে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হতে হবে। তিনি নারীদেরকে পুরুষের সমান অধিকার দাবি করতে বলেন এবং সমাজকে নারীদের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, একদিন নারীরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পাবে এবং সমাজে সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে।

Related Posts

Leave a Comment