হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

হাসান আজিজুল হকের “হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি” গল্পটি গ্রামীণ সমাজের চিকিৎসা-ব্যবস্থা, অন্ধবিশ্বাস এবং দুই বিপরীতধর্মী ডাক্তারের চরিত্রের প্রকাশ করে। নিচে হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু দেওয়া হল।

হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের মূলভাব

“হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি” গল্পটি হাসান আজিজুল হকের একটি চিরন্তন রচনা, যেখানে একটি গ্রামে দুজন ডাক্তারের মাধ্যমে সমাজের অদ্ভুত বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। অঘোর ডাক্তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেন, যাকে গ্রামবাসীরা “হেমাপ্যাথি” বলে ডাকে, আর তোরাপ ডাক্তার অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা দেন, যাকে স্থানীয়রা “এ্যালাপ্যাথি” নামে চেন। অঘোরের চিকিৎসাপদ্ধতি সহজ—সাদা গুঁড়ো ও স্পিরিট মিশ্রণ, আর তিনি রোগীদের সঙ্গে রসিকতা করেন, যেমন কাউকে বলেন, “তোমার পেটে ব্যাঙ হয়েছে!” অন্যদিকে তোরাপ ডাক্তার ভয়ঙ্কর ইনজেকশন দেন, যার সুই এত মোটা যে রোগীরা ভয়ে কাঁপে। শরৎকালে ম্যালেরিয়া মহামারি আকারে ছড়ালে তোরাপের রোজগার বাড়ে, কারণ তার ইনজেকশনই একমাত্র ভরসা। কিন্তু একদিন অঘোর ডাক্তারও ইনজেকশন দিতে চান, কিন্তু সুই ভেঙে রোগীর গায়ে ঢুকে যায়, যা শেষ পর্যন্ত এক যুবক দাঁত দিয়ে তুলে আনে। গল্পটি গ্রামীণ সমাজের অজ্ঞতা, চিকিৎসার নামে শোষণ এবং মানুষের অসহায়ত্বকে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরে।

হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের বিষয়বস্তু

৩০-৩৫ বছর আগের এক গ্রামে দুজন ডাক্তার বাস করতেন। একজন হোমিওপ্যাথ (গ্রামবাসীরা যাকে বলত “হেমাপ্যাথি” ডাক্তার), অন্যজন অ্যালোপ্যাথ (স্থানীয় ভাষায় “এ্যালাপ্যাথি”)। তাদের চিকিৎসাপদ্ধতি এবং চরিত্রগত পার্থক্য নিয়ে গল্পটি আবর্তিত হয়েছে।


১. অঘোর ডাক্তার: হোমিওপ্যাথ (হেমাপ্যাথি)

  • চিকিৎসাপদ্ধতি:
    • সাদা ময়দার মতো গুঁড়োতে কয়েক ফোঁটা স্পিরিট মিশিয়ে ছোট বল (পুরিয়া) বানিয়ে দিতেন। কখনো শুধু টিউবওয়েলের পানিতে স্পিরিট মিশিয়েও দিতেন!
    • রোগীদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। যেমন, একজনের পেটে “গরগর” শব্দ শুনে বলতেন, “তোর পেটে ব্যাঙ হয়েছে! ওষুধ খেলেই ব্যাঙ লাফিয়ে বেরিয়ে যাবে!”
  • চরিত্র:
    • দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল। পয়সা না থাকলে লাউ-শশা দিয়েও চিকিৎসা করতেন।
    • কথাবার্তায় বাড়াবাড়ি রকমের আত্মবিশ্বাসী। যেমন: “আমার ওষুধ খেলে রোগ উপচে পড়বে!”

২. তোরাপ ডাক্তার: অ্যালোপ্যাথ (এ্যালাপ্যাথি)

  • চিকিৎসাপদ্ধতি:
    • ভয়ানক ইনজেকশন: মোটা সুই (মোষের শিংয়ের মতো!) দিয়ে ইনজেকশন দিতেন। রোগীরা ভয়ে পালাতো, কিন্তু জোর করে ধরে চেপে ইনজেকশন দেওয়া হতো।
    • ম্যাগাক্রিন বড়ি: এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেকে অন্ধ বা পঙ্গু হয়ে যেত!
  • চরিত্র:
    • টাকার লোভী। ইনজেকশনের আগেই বলতেন, “দুই টাকা আগে দাও!”
    • শীত-বর্ষায় চাষাবাসে ব্যস্ত থাকতেন, রোগী দেখতেন না।

৩. গ্রামের পরিস্থিতি:

  • ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক: শরৎকালে ম্যালেরিয়া জ্বরে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যেত। রোগীরা পাথর চাপা দিয়ে কাঁপুনি থামাতো!
  • লোকদের অসহায়তা: তোরাপের ইনজেকশন ভয়ঙ্কর, কিন্তু বিকল্প নেই। অঘোরের ওষুধে ম্যালেরিয়া সারে না।

৪. গল্পের শেষ পরিণতি:

অঘোর ডাক্তার একদিন তোরাপের মতো ইনজেকশন দিতে চাইলেন!

  • ইদরিস আলী নামে এক রোগীকে কুইনাইন ইনজেকশন দিতে গিয়ে সুই ভেঙে গেল রোগীর গায়ে!
  • লোকজন হাসাহাসি করল, অঘোর লজ্জায় কাঁদতে লাগলেন।
  • শেষে এক যুবক দাঁত দিয়ে সুই টেনে বের করল!

আরও পড়ুনঃ ডেভিড কপারফিল্ড গল্পের মূলভাব ও বিষয়বস্তু

Related Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top